ফোন পেলেই অক্সিজেন নিয়ে হাজির চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক
- আপডেট টাইম : ২ জুলাই ২০২১, ০৪:২০ অপরাহ্ণ
- /
- 191 বার পঠিত
এইচ,এম,নাসির উউদ্দীন, কাটাখালি বাগেরহাট থেকেঃ করোনা মহামারীর সময়ে আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাচাতে অক্সিজেন সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হচ্ছে। একাধিক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে রোগী মারা যাচ্ছেন।এমন সময়ে বাগেরহাটে ‘চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকথ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফোন পেলেই বিনামূল্যে রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌছে দিচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্বেও কয়েকজন তরুণের মানবপ্রেমী এ উদ্যোগ প্রশংসীত হচ্ছে সর্বমহলে। মহৎ মানুষেরাও এগিয়ে আসছেন সহযোগীতায়।
গত পহেলা মে মাত্র দুথটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে তারা শুরু করেছিল। এখন তাদের সিলিন্ডারের সংখ্যা ১০। বিনা অক্সিজেনে, ঝড়ে পড়বে না কোনো প্রাণ- এই শ্লোগান নিয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি এলাকার আট তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমে ‘চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকথ যাত্রা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে তারা নিজেদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা চালায়। একপর্যায়ে তাদের এই মহতি উদ্যোগের বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নির্ধারিত নাম্বারে ফোন বা অক্সিজেন ব্যাংকের ফেসবুক পেজে সহযোগিতা চাইলে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন রোগীর বাড়ি। এপর্যন্ত অন্তত প্রায় অর্ধশত জন মুমূর্ষু রোগীকে তারা অক্সিজেন দিয়েছেন।
শুধু বাগেরহাট জেলা নয়, পার্শ্ববর্তী খুলনার রূপসাতেও অক্সিজেন সরবরাহ করেছেন এই স্বেচ্ছাসেবকরা। অক্সিজেন সরবরাহ করতে গিয়ে সংগঠনটির সাকিব হাসান জনি, কাজী রেজোয়ান, চয়ন দেবনাথ করোনা আক্রান্তও হয়েছেন। তবুও থেমে নেই তাদের কার্যক্রম।
চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা ও সমন্বয়ক জাকারিয়া হোসাইন শাওন বলেন, তার নিকট আত্মীয় ঢাকার গৃহিনী বাবলী আসিফ প্রথম তাদের সংগঠনকে দুইটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। তখন থেকে তাদের ৮ বন্ধুর সেচ্ছাশ্রমে করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ শুরু করেন। এরপর মহৎ মানুষদের সহযোগীতায় এ পর্যন্ত তাদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা বেড়ে ১২ হয়েছে। এরমধ্যে ব্যবসায়ী তহিদুর রহমান শাওন ২ টি ও আবু সাঈদ ১টি, স্বনামধন্য কার্টুনিষ্ট মোর্শেদ মিশু ২টি এবং নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তি ৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডর দিয়েছেন।
জাকারিয়া শাওন আরও জানায়, আমরা চেষ্টা করছি সমাজের হৃদয়বান মানুষের আর্থিক সহায়তায় বিনামূল্যে এই অক্সিজেন সেবা দিতে। একজন মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য সিলিন্ডারের পাশাপাশি একটা ফুল সেট এর প্রয়োজন হয়। একটি সেট তৈরি করতে প্রায় ১৭ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। একটি সেট রিফিল করা থাকলে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৫শ মিনিট অক্সিজেন দেওয়া যায়। তবে যদি কারও অক্সিজেনের প্রয়োজন বেশি হয় সেক্ষেত্রে দুই থেকে তিন ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায়। এই সিলিন্ডারগুলো বাগেরহাটে রিফিল করা যায় না। খুলনা থেকে রিফিল করতে হয়। একবার রিফিল করতে ১৫০ টাকা ব্যয় হয়। আমাদের যদি আরও কয়েকটি সেট থাকত তাহলে আরও বেশি মানুষকে সেবা দিতে পারতাম। তিনি এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার জন্য সমাজের বিত্তবান ও মহৎ ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক আরিফ, জনি ও রেজোয়ান বলেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি মুমূর্ষু রোগীর অক্সিজেন পৌছে দিতে। গভীর রাতেও মানুষের বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছি আমরা। এর মধ্যে একদিন রাত ১১টার সময় পার্শ্ববর্তী ভট্টবালিয়াঘাটা এলাকা থেকে ফোন করেন মহসীন মোড়ল নামের এক ব্যক্তি। তার খুব অসুস্থ সহধর্মীনীর অক্সিজেন লাগবে। ফোন পেয়ে অক্সিজেন নিয়ে ছুটে যাই আমরা। অক্সিজেন দেওয়া শুরু করি। পরে অক্সিজেন দেওয়া অবস্থায় বাগেরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার বকসির পরামর্শে তাকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা নিয়ে সুস্থ হন রামপাল এলজিইডিতে কর্মরত শাকিল মাহমুদ। তিনি বলেন, আল্লাহ্ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। অনেকটা সুস্থতা অনুভব করছি। ওই দিন (বুধবার-১৬ জুন) আল্লাহ ওসিলা হিসেবে চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের মাধ্যমে অক্সিজেন সাপোর্ট পেয়েছিলাম। নতুবা কি হত জানিনা।
মোড়লগঞ্জ উপজেলার ঢুলিগাতি গ্রামের রোগী সৈয়দ রিজভী আহমেদ শিপনের আত্মীয় লালীমা আহসান ও
বারাকপুর বাজারের মিঠুন অনুরূপ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ‘চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকথ-এর প্রতি।
বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন জানান, করোনা মহামারিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি ‘চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকথ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার। তিনি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান,” এই সংকট মুহুর্তে জীবন বাচাতে অক্সিজেন অনেক জরুরী। আর্তমানবতার সেবায় এই সংগঠনটির সেবা কার্যক্রম প্রশংসনীয়। তিনি সংগঠনটির উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে মুমুর্ষ রোগীর জীবন বাচাতে সংগঠনটির কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।##