অপপ্রচারঃ অবশেষে মুখ খুললেন সালাম মুর্শিদী এমপি
- আপডেট টাইম : ১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৫২ অপরাহ্ণ
- /
- 287 বার পঠিত
নিজের সম্পর্কে নানামুখী অপপ্রচার নিয়ে অবশেষে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন খুলনা- ৪ আসনের এমপি আব্দুস সালাম মুর্শিদী। অতি সম্প্রতি, শিয়ালিতে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে শুরু করে নিজ নির্বাচনী এলাকার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের সমর্থন দেয়া না দেয়া, দলের তেরখাদা থানা কমিটির সাময়িক বহিষ্কৃত সভাপতি এফ এম অহিদকে নিয়েও কথা বলেন। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাজধানীর পান্থপথে এনভয় টাওয়ারে বসে অতি সম্প্রতি আলাপকালে সালাম মুর্শিদী এসব কথা নিয়ে অনেক খোলামেলা আলোচনা করেন।
আব্দুস সালাম মুর্শিদী যিনি সালাম মুর্শিদী নামেই দেশ বিদেশে সমধিক পরিচিত। ৮০ র দশকে্র জনপ্রিয় ফুটবলার। দেশ সেরা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের টানা এক দশক সেরা স্ট্রাইকার ছিলেন। ঢাকা প্রথম বিভাগের জাতীয় ফুটবল লীগে তার দেয়া সর্বোচ্চ ২৭ গোলের রেকর্ড আজ অবধি কেউই ভাংতে পারেন নি। তারকা ফুটবলার থেকে মোহামেডানের ম্যানেজার, পরিচালক হয়ে বাফুফের সহ- সভাপতি। অন্য দিকে ফুটবল ছেড়ে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে আজ তিনি দেশে রফতানিমুখি গার্মেন্টস ব্যবসায়ের রীতিমতো আইকন। টানা প্রায় তিন দশক ধরেই তিনি সিআইপি। সর্বোচ্চ কর দেয়ার জন্য তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান কর বাহাদুর খেতাব পেয়েছেন।
দেশ সেরা বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছাড়াও ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, আবাসন, মার্কেট, আইসিটি, শেয়ার বাজার, আমদানি- রফতানি ব্যবসা রয়েছে তার। বিজিএমইএ সভাপতি হবার সুবাদে সরকারের খুব কাছাকাছি ছিলেন তিনি, যা আজও চলমান। আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি ব্যবসায়ী সমাজকে সাথে নিয়ে ২০১২ র দিকে আওয়ামীলীগের সাথে কাজ করতে থাকেন।পরে ২০১৮ র দিকে শেখ হাসিনার সাথে এক হেলিকপ্টারে উড়ে খুলনাতে গিয়ে জনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেন। খুলনা- ৪ আসনে তৎকালীন এমপি এস এম মোস্তফা রশিদি সুজা মারা গেলে উপ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগ প্রার্থী হিসাবে প্রথমবারের মতো এমপি হন। গত নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো এমপি হন।
অতি সম্প্রতি তিনি বেশ কয়েকটি ঘটনায় আলোচিত সমালোচিত হন। দক্ষ ফুটবলারের মতোই তিনি আবারও সব কিছুই গুছিয়ে এনেছেন।
আলাপকালে এক সময়ের জনপ্রিয় এই ফুটবল তারকা বলেন, আমি এমপি, এলাকার জনগনের প্রতিনিধি, সেই প্রেক্ষাপটে অত্র এলাকার অভিভাবক। আমি চাইলেও মুখ ফুটে সব বলতে পারি না। সেটা অশোভন, একই সাথে দলের জন্য ক্ষতিকর। আমি একজন খেলোয়াড় ছিলাম। জীবনে একটি সিগারেট পর্যন্ত খাইনি। সবার সাথে ভালভাবে কথা বলার চেষ্টা করি। কারোর ক্ষতি বা অমঙ্গল চিন্তা করি না। আল্লাহ আমায় অনেক দিয়েছেন। খালি হাতে খুলনা থেকে এসেছিলাম। আজ বিত্ত, সম্মান, ইজ্জত, প্রভাব, পরিচিতি, প্রতিপত্তি সবকিছুই আল্লাহ দিয়েছেন। তিন সন্তানকে মানুষ করেছি। আপা (প্রধানমন্ত্রী) নিজে আমায় চিনেন, জানেন, ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করেন, ডেকে টিকিট দিয়েছেন, এর চেয়ে আর সম্মান কি আছে? আমার যেখানে সফলতা সেখানেই আমি শত্রু। আমার উত্থান, সাফল্যই আজ আমার শত্রু। আমি কেন প্রধানমন্ত্রী বা শেখ পরিবারের কাছের? কেউ কেউ হিংসা করে, সব বুঝি। তাই আমায় মুখ বুজেই অনেক কিছুই হজম করতে হয়। তিনি জানান, শিয়ালির ঘটনাতে কেউ কেউ টেনে টেনে দড়ির মতোই লম্বা করতে চেয়েছিল। পারেনি তা করতে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে যাবতীয় তথ্য উপাত্ত সব আছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও সব কিছুই আছে। আমার তিন থানার জনগণ সব জানে। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি ঘর বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক এলাকায় নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় আছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার এখানে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে। যা ঘটে গেছে, তার জন্য আমরা সবাই দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী একই সাথে লজ্জিত। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই।
আলাপকালে নিজ থেকেই তিনি বলেন, আমার স্ত্রী দলের ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজ থেকেই সহযোগিতা অরে থাকেন। সেটা নিয়েও জেলার এক নেতার গাত্রদাহন। ছেলে মেয়েদের ডেকে ডেকে বলেছেন, আমার মিসেসের কাছ থেকে তারা সহযোগিতা কেন নেয়?
আক্ষেপ করে সালাম মুর্শিদী বললেন, দল একটা পরিবার, যেখানে আমরা সবাই সদস্য। সেখানে কেন এতো নোংরামি থাকবে? প্রয়াত এমপি সুজার সন্তানকে একটি কলেজের গভর্নিং বডি থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজের মেয়েকে সভাপতির চেয়ারে বসানো প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এটা সংশ্লিষ্ট দফতরের রুলেই আছে কেউ টানা তিন মেয়াদে থাকতে পারবে না। মন্ত্রনালয়ের কাগজ দেখিয়ে সালাম মুর্শিদী জানান, নিয়মের মধ্য থেকেই সব করল অথচ আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফেস বুকে ট্রলের শিকার হলাম। কিছুই বলার নেই কারন আমি জনগনের প্রতিনিধি, সেই অর্থে অভিভাবক। এক ছেলের চিকিৎসা নিয়ে বের হওয়া ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এমপি বলেন, ওই ছেলের যাবতীয় চিকিৎসা করেছি পা ভেঙ্গে যাবার পরে। অনেক পরে প্লাস্টার খোলার সময়ে পরিকল্পিতভাবে ভিডিও করে আমাকে দোষারোপ করা হল, আমি বলে কিছুই করিনি।
সালাম মুর্শিদী জানান, এসব নিয়ে আলাপ করতেও রুচিতে বাধে। তেমন মানসিকতা আমি বা আমার পরিবারের মধ্যে কাররই নেই। এফ এম অহিদের প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমি হংকং একটা ব্যবসায়ী গ্রুপের সাথে জুম মিটিং এ ছিলাম। এমন সময়ে অহিদ আমায় একরকম জোর করেই জুমে টেনে নেয়। এর মধ্যেই অহিদ আবেগে হোক আর অতিরিক্ত ভালবাসা দেখাতে গিয়েই হোক প্রিয় নেত্রি ও খুলনার কয়েকজন মাননীয় এমপি সম্পর্কে অবান্তর কথা বলেছে। আমি মিটিং এ থাকা অবস্থায় খুলনার সাথে জুমে জড়িত হই ফলে আমি নিজেই জানিনা ও ওই প্রান্ত থেকে কি কি বলেছে? পরে আমি সব শুনে থ মেরে গেলাম। আবারও ফেস বুকে ট্রলের শিকার হলাম। জানা মাত্রই আমি নিজেই সাথে সাথে মিডিয়া ও পত্রিকাতে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করে প্রতিবাদ দিয়েছি। অহিদের ঘটনায় মাননীয় নেত্রিকে ছোট করায় খুলনা জেলা আওয়ামীলীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। নেত্রি আমাদের অহংকার। বঙ্গবন্ধুর কন্যা তিনি, আমাদের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। উন্নয়নের প্রতীক। অহিদের ঘটনায় খুলনার কোনও এমপি যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাতেও আমি লজ্জিত।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তাদের বিপক্ষে বিদ্রোহীদের পক্ষে এমপির অবস্থান এমন প্রশ্নে সালাম মুর্শিদী জানান, যারা প্রতীক পাননি তারা এখনও দলে আছেন কিংবা রানিং চেয়ারম্যান আছেন। দলের কেন্দ্র থেকে ত্যাদের এখনও বহিস্কার করেনি। সেখানে আমি তাদের দল থেকে কিভাবে বের করে দেই, সেই এখতিয়ার আমার আছে কি? কেন্দ্র সিদ্ধান্ত জানাক তাদের ব্যাপারে, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই তখন আমার আমাদের সিদ্ধান্ত হবে। এটা আমার এলাকাতে না সারা দেশেই একই অবস্থা চলছে। রুপসার জনসভায় প্রক্যাশ্যে কাউকে রাজাকার বলা যাবে না এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সালাম মুর্শিদী জানান, আমার এই বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা এসেছে। মুলত আমি বলেছি, কথায় কথায় আমরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বলি ও বিএনপি করে, ও জামাত করে কিংবা বলি ওরা রাজাকার বা ও রাজাকার। এভাবেই আমরা ভিলেজ পলিটিক্স করি, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করি। এলাকাতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় ন্রাখতেই বলেছি, অযথা কাউকে ঘায়েল করতে যারে তারে যখন তখন রাজাকার কিংবা ও জামাত- শিবির এমন দোষারোপ করা যাবে না।পরিশেষে তিনি জানান, সারা দিন যা কিছুই করি না কেন, দিন শেষে হিসাব করতে হবে আমরা একদিন পরপারে যাবো, সব কিছুর হিসাব দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, জন নেত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন পুরনে দিবারাত্রি কাজ করতেছেন। আজ আমরা যদি নিজেদের মধ্যে হানা হানি, কাঁদা ছোড়াছুড়ি করি তাতে প্রতিপক্ষ সুযোগ পাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দল। দল না থাকলে আমরা কেউই থাকবো না।#