সাভারে কথিত ডাক্তারদের রমরমা বাণিজ্য।
- আপডেট টাইম : ১ জুলাই ২০২১, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ
- /
- 196 বার পঠিত
সাভারে কথিত ডাক্তারদের রমরমা বাণিজ্য।
সাব্বির হোসেন:ঢাকার সাভারে কথিত ডাক্তারদের লাগামহীন ছুঁটে চলা আর বাণিজ্য চলছে রমরমাভাবে। বিভিন্ন স্থানে ফার্মেসি বা মেডিকেল হল খুলে পল্লী চিকিৎসকরা হয়ে গেছেন ডাক্তার। সম্প্রতি সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করতে নিষেধ করা স্বত্ত্বেও উপেক্ষিত হচ্ছে এ নির্দেশ। আমাদের প্রতিনিধির অনুসন্ধানে এসব পল্লী চিকিৎসকদের নিয়ে উম্মোচিত হয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আমার ঘুমের ডিসটার্ব করছেন কেন? আমি একজন ডাক্তার, আমাকে ঘুমাতে দিন। এভাবেই গণমাধ্যম কর্মীর প্রশ্নের জবাব দিলেন একজন কথিত ডাক্তার।গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেল প্রায় সাড়ে তিনটায় ওই কথিত ডাক্তারকে চেম্বারে না পেয়ে মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি এ জবাব দেন। উনি অনেক বড় ডাক্তার। নামের আগে জুড়েছেন এমবিবিএসের পদবী “ডাঃ” শব্দটি। সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা আছে “ডাঃ কবির”। প্রকৃত অর্থে তিনি ডাক্তার নন। এলাকাবাসীর মতে, তিনি হাতুড়ে ডাক্তার। সাভারের হেমায়েতপুরের জয়নাবাড়ি এলাকায় ফার্মেসি দিয়ে ডাক্তার বনে গেছেন ওই এলাকার কবির। তিনি এখন ডাঃ কবির। কোন ডিগ্রী না থাকলেও স্বঘোষিত এই ডাক্তারের কবলে পরে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন এলাকার নিরিহ মানুষ। অনেক ফার্মেসিতে গিয়ে তিনি রোগী দেখে থাকেন। ডাক্তার কবির লেখা প্যাডে লিখে থাকেন এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ঔষধ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জয়নাবাড়িতে তামান্না মেডিকেল হল নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন কবির হোসেন। জীবনের বেকারত্ব ঘুচাতে তিনি এলএমএফপি (পল্লী চিকিৎসক) প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। এর পর থেকেই তিনি নামের আগে ডাক্তার শব্দটি জুড়ে দেন। কবিরের জয়না বাড়ির তামান্না মেডিকেলের কোন অনুমোদন নেই। সেখানে হাসপাতালের আদলে চলছে অবৈধ গর্ভপাত, রোগী সেবা, ঔষধ ব্যবসাসহ হাসপাতালের সকল কার্যক্রম। ঔষধ ব্যবসার জন্য তামান্না মেডিকেলের নামে কোন ড্রাগ লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তারদের ছবি, নাম, পদ-পদবী ব্যবহার করে চলছে তামান্না মেডিকেল। প্রতিষ্ঠানটির সামনে গেলেই চোখে পরবে ৫জন ডাক্তারের ছবিসহ বড় একটি সাইনবোর্ড। এই ৫জনের মধ্যে একজন কবির। এখানে ৫ থেকে ৬’শ টাকা ভিজিট নিয়ে মুলত: রোগী দেখেন এই কথিত ডাক্তার কবির হোসেন। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, কথিত ডাক্তার কবির তার পদবীতে লিখেছেন- এম.সি,এইচ,সি (শিশু হাসপাতাল), চর্ম, যৌন, মেসতা, নাকের পলিপাস, এলার্জি, মহিলাদের সাদা স্রাব এবং জন্ডিস রোগে বিশেষজ্ঞ। মা ও নব জাতক রোগে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তার ছবির নিচে রয়েছে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর। নম্বরটি হচ্ছে-সি-৭৫৯৯৭। এলাকাবাসীদের মধ্যে অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তামান্না মেডিকেলে যে সব ডাক্তাররা আসেন তাদের পদ-পদবী নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এ ব্যাপারে কথিত ডাক্তার কবিরকে না পেয়ে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি জানান, আমি একজন ডাক্তার। আমার ঘুমের ডিসটার্ব করছেন কেন? আমাকে ঘুমাতে দিন। এ ছাড়া তিনি জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাঁকে ডাক্তার লেখার অনুমতি দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি সাইবোর্ড পরিবর্তন করে নামের আগে পল্লী ডাক্তার লিখেছেন বলেও জানান। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা জানান, সম্প্রতি পল্লী ডাক্তারদের নিয়ে সভা করে সকলকে নামের আগে ডাক্তার না লেখার জন্য বলা হয়। কিন্তু কবির নির্দেশ না শুনে “ডাঃ কবির” সাইনবোর্ড দিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করে আসছিলেন। কয়েকদিন যাবত কবির সাইনবোর্ড পরিবর্তন করলেও পল্লী শব্দটি তিনি এমনভাবে লিখেছেন যা চোখে পরে না। এটি সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারনার শামিল। এলাকার সচেতন মহল কথিত ডাক্তার কবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। এছাড়াও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানা গেছে। স্বাস্থ্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্টসূত্র জানায়, কবিরের এভাবে চেম্বার দিয়ে রোগী দেখার কোন নিয়ম নেই। (চলবে)